আমি মোঃ সাইফুল ইসলাম
আমার জন্ম ৫/১২/১৯৯২
আমার বয়স যখন ৪-৫ বছর, তখন আমি এবং আমার চোট বোন মাদ্রাসায় পড়তাম, মাদ্রাসায় আমাদের যা কিছু পড়াতো তাই আমরা বাড়িতে এসে দাদাকে বলতাম। সময়টা অনেক আনন্দের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো,
প্রায় চার-পাঁচমাস মাদ্রাসায় পড়ার পর আমাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন আমাদের মা, তখন আমার বাবা ছিলেন জাহাজে, আমার বাবা জাহাজে চাকরি করতেন, এরমধ্যে মা আমাদের কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন, স্কুল ছুটি হলে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন, স্কুল আমাদের বাড়ির কাছাকাছি, ৫-৬ টা বাড়ি দুরত্ব ছিলো। যাইহোক সেই সময়গুলো সত্যিই অনেক সুন্দর ছিলো, পাখি গান করতো, আকাশে কত রকমের তারকা ছিলো, চাঁদের আলোটা অনেক সুন্দর ছিলো। মা চাঁদ মামার গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো। কারো সাথে মিশতে দিতোনা, তাছাড়া মেশার মত কেউ ছিলোনা বললেই চলে, স্কুলেও কারোর সাথে মিশতে পারতামনা, কারন স্কুল ছুটি হওয়ার আগেই মা গিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন, ক্লাশ ওয়ানে আমার রোল নং ছিলো ৪৮ আমার বোনের ৪৭, ক্লাশ টু-তে উঠলাম, রোল নং ১৭, ন্যায় অন্যায় কিছুই বুঝিনা তখন, ক্লাশ থ্রি-তে উঠলাম যখন তখনি আমার জীবনে এলো কঠিন এক মিথ্যে- (ক্লাশ থ্রী-তে আমার এক কাকা ফেল করতে করতে রয়েগেছে, বয়সে আমার ৩-৪ বছরের বড় হবে, তার নাম মনু, সে আমাকে ফুসলিয়ে দোকান থেকে ২৫ পয়সার লজেন্স ২টা ৫০ পয়সা, তার জন্য একটা আমার জন্য একটা বাকিতে কিনিয়েছে আমার নামে, ভয়ে মাকে বলতে পারিনি, মা যদি বকা দেয়, বা কিছু বলে, যাইহোক ২-৩ দিনপর দোকানের মালিক ক্লাসে এসে হাজির তার ৫টাকা দিচ্ছিনা কেন? আমিতো ঘাবড়ে গেলাম একি কি বলছে সে, ওই কাকাটাও একই কথা বলছে, আমি বলছি খেলাম ৫০ পয়সা, তারা বলছে ৫টাকা এইবার কি করি আমি, ভয়ে মাকে ৫০পয়সার কথা বলিনি এখন যদি শুনে ৫ টাকা কি করবে আল্লাই ভালো জানে। ভয়ে পরেরদিন স্কুলে যাইনি, এদিক সেদিক পালিয়ে যাচ্ছি, দাদা দাদির কাছে গিয়ে ঘুমাচ্ছি, দুইদিন কেটে গেলো স্কুলে যাইনি, পরদিন সকালে মা আটার রুটি বানিয়েছিলো সকালের নাস্তা, ঘরে ইঁদুর মারার ওষোধ ছিলো, আমি কিছুটা ইঁদুর মারার ওষুধ রুটিতে মেখে নিয়েছি খেয়ে মরে যাবো বলে, কিন্তু খেতে পারিনি, মা আমাকে তাড়া করছিলো স্কুলে যাওয়ার জন্যে, আমি এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছি রুটি হাতে, আর ভাবছি আমি কি এই রুটি খাবো নাকি খাবোনা, যাইহোক দৌড়াদৌড়ি করার কারনে রুটিতে ময়লা লেগে গেছে তাই আর রুটি খাওয়া হয়নি, (আমি মরে যেতে চাইছি কারন পৃথিবিতে সত্য নেই বলে) তার কয়েক মাস পরে এলো রমজানের ঈদ, ঈদে চোট ফুফুর বাড়িতে গেলাম, ফুফুর বাড়িতে গিয়ে দেখি তাদের দরজার নিছে কয়েকটা ৫ টাকার নোট পড়ে আছে, ১০-১৫ টাকা ছিলো সেখানে তারমধ্যে ১টা নোট ছিলো চেড়া, আমি সেগুলো নিলাম, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা শার্ট পড়ে আছে দরজার উপরে, মনে হলো শার্টে আরো টাকা থাকতে পারে, তখন আমার মনে শয়তান ঢুকেছিলো মনে হয়, শার্টের পকেটে দেখলাম আরো ৩০-৪০ টাকার মত আছে, সেটাও নিয়ে নিলাম, মোট ৫০-৫৭ টাকা হলো সেখানে, যাইহোক আমি ২ টাকার চুইংগাম কিনেছিলাম, চেড়া ৫ টাকার নোটটা রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলাম, বাকিটা মেজো ফুফুর বিছানার নিছে রেখেছিলাম, কাউকে কিছুই বলিনি, কারন স্কুলে গেলে কিছু খেতে পারবো, চোট ফুফুর বাড়ি থেকে গেলাম মেজো ফুফুর বাড়িতে, সেখানে রাত্রে থাকার জন্য ফুফু রেখে দিলো, সকালে ফুফাতো বোনের সাথে বাড়িতে আসার কথা বলল, ফুফুর কথা মত আমি থেকে গেলাম, রাতে চোট ফুফু পাগলের মত এসে হাজির মেজো ফুফুর বাড়িতে, আমাকে নেওয়ার জন্যে, আমি চোট ফুফুর সাথে গেলাম, আমাকে রাতের খাওয়ার সামনে দেওয়া হলো, লালশাক দিয়ে, আমি ভাত মুখে নিলাম, এমন সময় আমার চোট ফুফু বলে উঠলো আমি টাকা নিয়েছি কিনা, আমিতো লজ্জায়-ভয়ে স্বীকার করছিনা, কাঁদছিলাম, এরমধ্যে মেজো ফুফুর মেয়ে বড়োটা এলো তার নাম মৌসুমি, এবং বলতে লাগলো চাউল পড়া এনেছে আমিতো আরো ভয় পেয়ে গেলাম, তারা বলছে চাউল পড়া খেলে রক্ত বমি হয়ে মানুষ মারা যায়, আমি ভয়ে বলেছি টাকা নিয়েছি, কিন্তু কিভেবে নিয়েছি সেটা বলিনি, এবং কোথায় রেখেছি সেটা বলেছি, মৌসুমি আপা তাদের বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়ে আসলো, সেইদিন থেকে ফুফুদের চোখে আমি চোর হয়ে রইলাম, তার কয়েক মাস পর আমার সেজো ফুফু কহিনুর এলো আমাদের বাড়িতে বেড়াতে, ফুফুর কি যেন হারিয়ে গেছে, আমি আমাদের গাব গাছে উঠে গাব পাড়ছিলাম, সেজো ফুফু আমাকে গাছ থেকে নামিয়ে আনলো চোর বলে, একটা থাপ্পড় মেরেছিলো আমাকে, আমি বললাম আমি নেইনি, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুফু তার হারানো জিনিস পেয়ে গেছে, তিনি রেখেছেন এক জায়গায় খুঁজেছেন অন্য জায়গায়, আমাকে চোর বলার কারন ঐ একটাই (চোট ফুফুর বাড়ির ঘটনাটার কারনে), তারপর থেকে আর কোন ফুফুর বাড়িতেই যাওয়া হয়নি, গেলেও তাদের প্রয়োজনে গিয়েছি, কিন্তু সত্য বলতে পারিনি আজো, আজ আমার জীবনের কিছু কথা আমি সবাইকে বলবো, যেগুলো আমাকে সবসময় ভাবায়, এজন্যই বলবো কারন আমরা মিথ্যের মধ্যে আছি, আমার জীবনি পড়ে আপনারা দয়াকরে সত্য বলুন, সত্যই মানুষের আসল বন্ধু, তারপর ক্লাস ফোর এ উঠলাম আমার রোল নং ৯, (ক্লাশ থ্রিতে রোল নং ছিলো ১৬) আমরা বেশ ভালোই আছি তখন, মা আমাকে আর আমার বোনকে ঘরের বাহির হতে দিতোনা, তালা মেরে ঘরে রেখে বাহিরে যেতো, কারো সাথেই মিশতে পারিনি, কোন বন্ধু বান্ধব নেই আমার, ক্লাশ ফাইভে উঠলাম তখন আমরা নতুন বাড়িতে আসছি, সেটা ছিলো ২০০২ সাল, তখন আমার পড়ালেখায় অমনোযোগ শুরু হয়েছে, কারন নতুন বাড়ি, নতুন মানুষ, সময়টাই ভিন্ন, যাইহোক কোন রকমে ক্লাস ফাইভ পাস করে আসলাম, এইবার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন একাডেমিতে ভর্তি করালো ক্লাস সিক্স এ রোল নং ৮৩, বাবাও চাকরি রিজাইন দিয়ে চলে এসেছে তখন, আমাদের সংসারে অভাব শুরু হতে যাচ্ছে, কারন নতুন বাড়ি, নতুন ঘর, সবকিছুই নতুন, তারমাঝে বাবার চাকরি ছেড়ে দেওয়া, অভাব তো না চাইলেও আসবে, অভাব অনটনের মাজে পড়ালেখা ভালো লাগেনা, সেভেন এ উঠলাম, রোল নং ২১, কষ্ট করে ক্লাস এইট এ উঠলাম, রোল নং ৩৩, দ্বিতীয় পরিক্ষা দিলাম, এমন সময় সংসারে অবস্থা পুরাই খারাপ, ভাই-বোন নিয়ে বাবা-মা খুব কষ্ট করে, পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া পাইনা, জামা কাপড় নেই, অনেক কষ্ট, বাবা আমাকে টেইলরের দোকানে দিলো, দুইদিন যাওয়ার পর দেখি তারা পয়সা ছুড়ে মারে গায়ের দিকে, (মনে হলো আমাকে পরিক্ষা করে তারা) তারপর আর যাইনি সেই কাজে, কিছুদিন পর দিলো নান্দিয়া পাড়া বাঁধন টেইলারে, ৪-৫ দিন পর তাদের মালিক পরিবর্তন হয়েছে, দোকান তেমন খোলেনা, তাই আর যাওয়া হয়না, কিছুদিন পর দোখান খুললো আমিও কাজে যেতে লাগলাম, কিছুটা সেলাইয়ের কাজ শিখলাম, লুংগি ছায়া ব্লাউজের বোতামের গাই করা, প্যান্টের নিছের সাইডের হাতের কাজও শিখেছিলাম, টাকা পয়সা কিছুই দেয়না, তারপর দেখি কাজ শিখায়না চা-টা আনায় আমাকে দিয়ে, তাই এই কাজটিও ছেড়ে দিলাম, এদিকে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ, বাবা মায়ের গায়ে হাত তোলেন, সংসারে অভাব থাকলে মনেহয় এমনি হয়, কিছুদিন পর বাবা দিলেন টেম্পুর হেল্পারি করতে, দুই-তিনদিন পর থানা থেকে পেট্রোল ডিউটিতে গেলাম, আমি পুলিশদের সাথে বসেছিলাম টেম্পুর ভিতরে, পুলিশকে আমার বাবার বিষয়ে বললাম, পুলিশরা আমাকে কিছুই রিপ্লাই দেয়নি, তারপর বাবা মায়ের কাছে কথাগুলো বললাম, আমি পুলিশদের যা যা বলেছিলাম, মা-বাবা ভয় পেয়ে গেলেন, আমার যেন কোন ক্ষতি না হয়, তারপর আর টেম্পুতেও যাইনি, এরপর কিছুদিন কেটে গেলো, অভাব আরোও বাড়তে লাগলো, (এদিকে বাবা আমাকে বিয়ে করানোর কথা ভাবছেন, আমার জন্যে মেয়েও দেখেছেন তিনি)সেই যে মনু কাকা ছিলো, তার মা একদিন আমাদের বাড়িতে এলেন আমাদেরকে দেখতে, আমাদের কষ্ট দেখে তিনি তার ভাইয়ের দোকানে আমাকে চাকরি নিয়ে দিলেন, (জসিম ভাই, রামপুর-তালতোলা) বেতন নিয়ে মা-বাবাকে কিছু বলেছে কিনা আমি যানিনা, আমি চাকরি করতে চলে গেলাম, সেখানে দুই-তিনমাস চাকরি করলাম, সেখানে একটা মেয়ে ছিলো, মেয়েটি সম্পর্কে আমার ভাগ্নি হয়, সেই ভাগ্নির ফুফাতো ভাই বোর্ডিং থেকে এলো (তার নাম হাডারি), সে আমাকে দেখতে পারতোনা, সে ভাবতো সেই ভাগ্নির সাথে আমার প্রেম-ট্রেম কিছু থাকতে পারে, তাই সে আমার সাথে একদিন মারামারি করলো, মারামারির বিষয়টা কাউকে বলিনি, মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো বাড়ি আসার জন্য, বাড়ি আসতে পারছিনা, আমি পথঘাট চিনিনা, কিযে করি কিছুই ভালো লাগছেনা, তারপর একদিন ঐ দোকান থেকে ১৫০ টাকা চুরি করে বাড়িতে চলে এসেছি, এরমধ্যে তারা আমার মা-বাবাকে কোন টাকা পয়সা দেয়নি, মানে আমার বেতন ধরেনি, যাইহোক তারা খবর নিয়ে জানতে পারলো আমি বাড়িতেই এসেছি, তিন-চার দিন পর আমার মেজোমামা নিয়ে গেলেন ওই দোকানে, এই আশায় যে যদি সেই দোকানের মালিক আমাদেরকে কিছু দেন তো আমার মা-বাবা ভাই-বোন কিছু খেতে পারবে, দোকানের মালিক কিছু মুদি মাল দিয়েছিলেন, তবে আমায় কোন বেতন দেয়নি, আরো মাস দুয়েক চাকরি করে চলে এসেছিলাম, সেখানে আর যাইনি, তারপর বাবা আমাকে দিলেন রিক্সার মেকানিক শিখতে, প্রথম দিন বেশ ভালোই কাজ করেছি, অনেক কাজ ছিলো, অনেক রাত হয়ে গেছে কাজ করতে করতে, বাড়ি আসতে পারিনি, রিক্সার মেকারের সাথে তার বাড়ি নিয়ে গেলো, রাতের খাওয়ার খেয়ে শুতে গেলাম, এমন সময় তার ছেলে ঘুম থেকে উঠে আমার সম্মন্ধে জানতে চাইলো তার বাবার কাছে, তার বাবা আমার পরিচয় দিলো তাকে, তখনি ছেলেটি বলে উঠলো সবাই সাবধানে ঘুমাইয়েন বলা যায়না, হয়তো আমাদের কিছু ছুরি করে নিয়ে যাইতে পারে, ছেলেটির বয়স আমার চেয়েও কম ছিলো, এই কথা শুনার পর মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো আমি কি সত্যিই দেখতে এতোটা খারাপ, সেখানেও ১০-১২ দিন কাজ করলাম, দেখি কেউ টাকা পয়সা কিছুই দেয়না, সবাই শুধুশুধু কাজ করায়, আড়চোখে দেখে, তারপর বাবা পানির কল বসানোর কাজ করতো আমাদের গোষ্ঠীর এক জেঠার কাছে, আমাকে বাবা সেই জেঠার দোকানে কাজ নিয়ে দিলো, আমি দোকানে বসবো, টুকটাক বেচাকেনা করবো, কিন্তু জেঠা আমাকে দোকানে বসাতেননা তিনি তার বাড়িতে কাজ করাতেন, তার জালা উঠানো, জমি সাফ করা, ইত্যাদি, এগুলো কি আমার ভালো লাগে, চলে আসলাম কয়েকদিন পর, তার কয়েক মাস পর আমার বড়মামা এলেন চিটাগং থেকে, তিনি আমাকে চিটাগং নিয়ে গেলেন, তার শালার কম্পানিতে, সেই বছরেই কম্পানি খুলেছিলো তারা, মামা আর তার শালা মার্কেটিং করতেন দিনের বেলায়, রাতে এসে ওর্ডার অনুযায়ী প্রডাকশন দিতেন, কিছুদিন পর আমি নিজেই প্রডাকশন দিতে শিখে গেছি, যাইহোক সেখানেও দুই-তিনমাস কাটলো বেশ ভালোই, এখানে আমি একাই সব কাজ করি এখন, আরো দুই-তিন মাস পর আমাদের গ্রামের দুটো ছেলে এলো এখানে, (নানার বাড়ির সয়েল আর মোল্লা বাড়ীর মাছুম), তাদেরকে দেখে আমি খুবই আনন্দিত, তাদের সাথে ঘুরতে যেতে পারি, ভিবিন্ন কথা শেয়ার করতে পারি, মনটা একটু ভালো থাকতো তখন, তবে তাদের দিকে তাকালে আমার বাড়ির কথা মনে পড়তো, কিছুদিনের মধ্যে তাদেরকে কিছু কাজ শিখিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে এলাম, আমাকে ১০০০ কিংবা ১৫০০ টাকা দিয়েছিলো গাড়ি ভাড়ার জন্যে, আমি বেতনের কথা কিছুই জানতে চাইনি, কারন এখানে আমার আপন মামা আছেন, তিনি অবশ্যই আমার মা-বাবাকে টাকা পয়সা দিয়েছেন ভেবে নিয়েছি, বাড়িতে এসে পাঁচ-ছয়দিন থেকে আবার চলে গেলাম, গিয়ে দেখি মামা বাড়িতে আসছেন আজকেই, আমি গিয়ে পৌছানোর আগেই মামা বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন, (কিছুকথা না বললেই নয়- আমাদের পাশের বাসায় একজন আন্টি ছিলেন, তার একটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে, মেয়েটির বয়স ১৮-১৯ হবে, ছেলেটির ৭-৮ বছর হবে হয়তো, ওই আন্টির স্বামী থাকতেন সৌদি আরব, ওই আন্টির সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো, আমাকে তিনি ছেলের মত আদর করতেন) যাইহোক, আমি বাসায় যাওয়া মাত্রই সহেল আমাকে ডেকে বললো তারা নাকি দেখেছে আমার মামা সেই আন্টির সাথে শুয়ে ছিলো, তারপর তারা প্রমান করেছে মামার সাথে ওই আন্টির খারাপ সম্পর্ক আছে। (আমি বাড়িতে থাকতেই তারা দেখেছিলো) তার কিছুদিন পর তারাও চাকরি ছেড়ে চলে গেলো, আবার আমি একা হয়ে গেলাম, ওইসব কথা শুনার পর আমি আর আন্টিদের সাথে তেমন একটা মিশিনি, তারপর আসলো আরেকটি ছেলে, তাও সে মামার শালার গ্রামের, সে আমার মামাতো ভাইকে চেনে, এবং ভিবিন্ন কথা বলে আমার সাথে মিশলো, আমি তাকে আমার নিজের মায়ের পেটের ভাই ভেবেছিলাম, তার কষ্ট হলে আমিও কষ্ট পেতাম, তাকে আমি সবকিছু খুলে বললাম, এবং সতর্ক করলাম, ওই আন্টির কাছে যেন না যায়, তারপর একদিন আমি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি, তখনো আমাকে বেতন দেয়নি, ১০০০-১৫০০ টাকাই দিলো, তিন-চারদিন থেকে আবার গেলাম, এইবার দেখি সবাই আমার সাথে উল্টো পাল্টা আচরন করছে, কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিনা, সবাই আমাকে ভয় দেখাচ্ছে বড় মামা আসলেই বুঝাবে সব, (ওই ছেলেটা আমার বলা কথাগুলো সবাইকে বলে দিয়েছে, সবাই আমাকে মনেমনে খারাপ ভাবতে লাগলো এই ভেবে যে আমি এতো চোট একটা বাচ্ছা কিভাবে এতো কিছু বুঝি, তাই সবাই আমাকে ঘৃনা করতে লাগলো, সত্য বলতে আমি কিছুই বুঝিনি, সহেল আমাকে বলেছিলো বলেই আমি তাকে এসব বলেছিলাম) মামা তখন বিদেশে যাবেন, তাই কাজে ঢাকায় ছিলেন, আমাকে কেউই কিছু বলেনি, এরমধ্যে ওই ছেলেটিও চাকরি ছেড়ে চলে গেলো (ছেলেটির নাম রিপন), আসলো আমার মামার খালাতো ভাই, তাও আবার ম্যানেজার পদে, তিনি আমাকে নিয়ে ব্যাংকে টাকা তুলতে যেতেন, মালামাল কিনতে যেতেন, তিনি ব্যাংকে টাকা তুলে সেখান থেকে চুরি করতেন, আমি কিছুই বুঝতামনা, এইরকম একদিন উনি ছিলেন না, আমাকে ব্যাংকে পাঠালেন আমি টাকা তুললাম, দেখলাম ৫০০টাকা বেশি, আমি ভাবলাম আমার গনায় ভুল হচ্ছে, আমি কয়েকবার টাকাটা গুনলাম, দেখি ৫০০টাকা বেশি আছে, ৫০০টাকা আমার কাছেই রেখে দিলাম, তারপর মামার শালাকে টাকা দিলাম, তিনি বললেন ৫০০৳কম কেন, আমি বল্লাম এটাই দিয়েছে ব্যাংক থেকে, (লজ্জায়- সত্য বলতে পারিনি) তারপর তিনি আমাকে আবারো ব্যাংকে পাঠালেন, আমি সেই টাকাটা আবার একসাথেই রাখলাম, ব্যংক ম্যানেজার টাকাটা গুনে ৫০০টাকা রেখে দিলেন, আমি চলে এসেছি, তারপর সোজা চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছি, কিভাবে মুখ দেখাবো যানিনা, কিন্তু সত্য বলতে পারিনি, তারা ভাবছে আমি চোর, তারা ভাবছে আমি তাদের অনেককিছু চুরি করেছি। (কিন্তু আমি সত্য বলছি, আমার আল্লাহ জানেন সবকিছু, আমি কিছুই চুরি করিনি, হ্যাঁ আমার বই পড়ার অভ্যেস ছিলো, আমি নাস্তা না খেয়ে নাস্তার টাকা দিয়ে বই কিনতাম, আমার গল্প পড়তে ভীষণ ভালো লাগতো) হয়তো সেই থেকেই বড় মামা আমাকে চোর ভাবতেন, বড়মামা এখনো আমাকে চোর ভাবেন, কিন্তু কেন চোর ভাবেন সেটা বলেনি, তার কিছুদিন পর মায়ের এক খালাতো ভাইয়ের টেম্পুর গ্যারেজে দিলো কাজ শিখতে (আজিম মামা), বেশ ভালোই কাজ শিখেছি কয়েক দিনে, টেম্পুর ইঞ্জিন ছাড়া আর সব কাজ একাই করতাম, সেখানেও তারা টাকা পয়সা দিতোনা, হঠাত একদিন বাড়িতে এলাম, মায়ের একটি বাটন ফোন ছিলো, তখন ভিডিও প্লে করা যায় এমন মোবাইল বের হয়েছে কেবল, তাও চায়না বাটনে, আমাদের বাড়িতে কারেন্ট নেই, আমরা কিছুটা দূরে একটি বাড়িতে গিয়ে মোবাইলে চার্জ দিতাম, মায়ের মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে দেখি ভিডিও প্লে করা যায় এমন একটি মোবাইল এক কোনায় পড়ে আছে, কিছুক্ষন বসে ভিডিও দেখলাম, হঠাত কারেন্ট চলে গেলো, ভাবলাম মোবাইলটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ভিডিও গুলো দেখি, পরে আবার মায়ের মোবাইল নিতে আসলে দিয়ে যাবো (আমার ভাবনাটা ১০০% সত্য ছিলো, আপনারা হয়তো বলবেন নিজেকে বাঁছানোর জন্যে বলছি)। বাড়িতে আসার পর মনটা আর মোবাইলটা ফেরত দিতে চাইছেনা, চলে গেলাম টেম্পুর গ্যারেজের কাজে, আমার বাড়িতে কেউ যানেনা, হঠাত করে খবর হলো মোবাইল পাচ্ছেনা তাদের, আমিতো সেখানে মোবাইল চালাচ্ছি উড়া দুড়া, টেম্পুর গ্যারেজ এর মালিক আমার বাড়িতে ফোন করে আমার মাকে জিজ্ঞাসা করেছে মনে হয়, ওখানে সবাই বুঝে গেছে এটা চুরি করা মোবাইল, এদিকে আমার মা বুঝতে পেরেছে মোবাইলটা আমিই নিয়েছি, আমি বাড়িতে আসলাম, আমাকে কেউই কিছু বলেনি, কেউ কিছুই বলছেনা, মোবাইলের মালিক হার মেনেছে মোবাইল হারিয়ে গেছে, হয়তো আর তার মোবাইল পাবেনা, (মোবাইলের মালিক মাসুম, আমার সাথে কাজ করা মাছুম) কিন্তু আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, আমি ভাবতে থাকলাম মোবাইলটা কিভাবে ফেরত দেওয়া যায়, আমি মাছুমের কাছে বল্লাম মামু মোবাইলটা ফেরত দিবো আমি, সে বললো ঠিক আছে তাহলে দোকানের দিকে নিয়ে আয়, আমি নিয়ে গেলাম, আমাকে তখন সবাই বললো মোবাইলটা কোথায়, আমি বের করে দিলাম মোবাইলটা, ঠিক তখনি আমাকে মাছুমের বড় ভাই মহিন একটা ঘুষি মারলো, আমি কিছুই বলিনি একে একে সবাই আমাকে মারলো, ওখানে প্রায় ৫-৬জন লোক ছিলো, সবাই আমাকে মেরেছে, (তবে কি এটাই মানবাতা? সত্য বলতে গেলে কি এমনি হয়? নিজেকে বোঝালাম এটা আমারি কর্মের ফল) আমাকে বেঁধে রেখেছে, আমার নানা ও মামাকে খবর দিলো, আমার নানা এসে আমাকে রড লাইট দিয়ে আমার মাথায় একটি বাড়ি মারলেন, (এটাই ছিলো আমার জীবনের শেষ চুরি, আর কখনো চুরি করিনি আজ পর্যন্ত) তারপর আর টেম্পুর কাজ করতে যাইনি লজ্জায়, কয়েক মাস পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম, (এটাই আমার জীবনের প্রথম ঢাকা ভ্রমন, ঢাকা যাবো বলে আমার নানি আমাকে মোবাইল কেনার টাকা দিয়েছিলেন, সেটাই আমার জীবনের প্রথম মোবাইল যেটিতে আমি ইন্টারনেট কানেকশন পাই, জাবা ছিলো মোবাইলটিতে, তবে মোবাইলটি পুরোনো কিনেছিলাম) ঢাকায় প্রথম কাজটা ছিলো মুদির দোকানে, সেখানে দশ-বারোদিন যেতে না যেতেই দেখি তারা আমার সাথে জামাই আদর করে (তাদের একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে ছিলো, আমার মনে হলো তারা আমার সাথে মেয়েটির বিয়ে দিবে) তারপর আমার বাড়িতে আলাপ করলাম, শুনলাম আমার বড় বোন ঢাকায় থাকে, আমার দুলাভাইয়ের দোকান আছে ঢাকায়, আমি নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করে দেখা করলাম, তারপর চাকরি ছেড়ে ওখানে চলে যাই, বোনের কাছে গিয়ে আরো বিপদ আসলো আমার জীবনে (আমি বাসি খাওয়ার খাইনা, কারন আমার মা কখনো খাওয়ানি, ফ্রীজের খাওয়ার ও খাইনা কারন আমার মা খাওয়ায়নি) এখানে সব খাওয়ার বাসি আর প্রায় পছা, খেতে পারতামনা কিছু বলতেও পারতামনা, এখানে ছিলো ইলেকট্রনিকস কাজ, দুলাভাই ফ্রীজের মিস্ত্রি ছিলেন, তিন-চারমাস পর বাড়িতে এলাম, (আমার পাশের বাড়ির জেঠাতো বোন আমাকে বলেছে আমার পছন্দের একটি মেয়ে আছে, যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, মাদ্রাসায় পড়ে, পর্দা করে, তখন আমি সেই মেয়েটিকে দেখতে যাই আমার জেঠাতো ভাইয়ের সাথে, আমি মেয়েটিকে সরাসরি দেখিনি, তার বইয়ের ভিতরে তার ছবি পেয়েছিলাম, তার ছবি নিয়ে এসেছিলাম, সেইদিন রাতের খাওয়ার খেতে বসেই আমি আমার বাবা-মা কে বলেছিলাম আমার মনের কথা, ঐ মেয়েটির বিষয়ে বলেছিলাম, যে মা আমি পাঁচ বছর বিদেশ করে এসে তারপর তাকে বিয়ে করবো, আপনারা মেয়েটির বাবা মায়ের সাথে কথা বলে রাখুন, তারা যেন আমার জন্য তাদের মেয়েকে রাখেন, জবাবে, বাবা মা দুজনেই না বললেন, আমি আর কিছুই বলিনি, আমি তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম, কারন আমি আমার বাবা মায়ের অবাধ্য হবোনা, এটাই ছিলো আমার প্রতিজ্ঞা) চার-পাঁচদিন পর ঢাকায় গেলাম, আমার মা দুলাভাইকে মেয়েটির বিষয়ে সবকিছু বলেছেন, তখন থেকে দুলাভাই আমার সাথে খারাপ আচরন করতেন, (একদিন আমার ভাগ্নীকে স্কুল থেকে আনতে গেলাম, তার বান্ধবীরা তার কাছে আমার পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে আমার মায়ের কি জানি লাগে, এখানে আমার দুঃখ হলো সে আমাকে মামা বলে পরিচয় দেয়নি) সেইদিন থেকেই আমি পুরোপুরি পর ভাবতে লাগলাম তাদেরকে, যাইহোক অনেক কষ্ট করে বছর খানেক ছিলাম, এরমধ্যে অনেকিছুই হয়েছে সেগুলো না বললেও চলে, (কখনোই আমি বেতন পাইনি আমার হাতে, ভাবতাম মা-বাবাকে দিয়েছে, পরে শুনলাম কিছুই দেয়নি মা-বাবাকে), সেখান থেকে আসার কয়েক মাস পর আমাদের বাজারে এক দোকানদার (হাবিব) আমাকে সেলসম্যান এ চাকরি দিলো, দিনে ২০০ বা ৩০০৳ বেতন, দিনের টাকা দিনে দিবে বলেছিলো, দুই-তিনদিন কাজ করার পর যার ছবি এনেছিলাম তাদের বাড়ির সামনের দোকানে অর্ডার কাটতে গেলাম, ভ্যান ড্রাইভার মাল নিয়ে পিছনে, ভাবলাম তাদের বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসি, তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তাদের মোবাইলে কি যেন একটা সমস্যা ছিলো সেটা দেখতে, আমি সেখানে গিয়েই চলে এসেছি, (সত্য হচ্ছে আমি কোনদিনই মেয়েটির সাথে কথা বলতে পারিনি, দেখাও করতে পারিনি, সবাই ভাবতো আমি প্রেম করছি) কাজ শেষে হিসাব করে দেখে ২টা ৫ লিটার সয়াবিন তেল নাই, সেই ভ্যান ড্রাইবারকে অনেক মেরেছে দোকানের মালিক, আমাকে কিছুই বলেনি, তবে আমার মা-বাবাকে ডেকে নিয়েছেন তার দোকানে, সে আমার মায়ের মোবাইলটা নিয়ে গেছে, তারপর, অপবাদ হলো, (আমি নাকি আমার প্রেমিকাকে সয়াবিন তেল দিয়েছি, কেন এতো মিথ্যে অপবাদ পাচ্ছি যানিনা,) তার কয়েক মাস পর আরেকটা মুদি দোকানে কাজ নিয়েছিলাম, লোকটা মোটেই ভালো ছিলোনা, অনেকেই চেনে তাকে (টুক্কুন মিয়া, নান্দিয়া পাড়া বাজার) দুই-তিনমাস চাকরি করে ছেড়ে দিলাম, তার মুরগির ফার্ম আছে, সেখানে খাটতে মোটেই ভালো লাগছিলোনা, কয়েক মাস পর আবারো ঢাকায় গেলাম, তখন আমার বাবা ঢাকা একটা মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করেন, বাবা চাকরিটা ঠিক করে দিয়েছিলেন, সেটাও ইলেকট্রনিক দোকান, দোকানের মালিক দুসম্পর্কে মামা হয়, (আলম) বেতন ২৫০০টাকা থাকা খাওয়া মালিকের, প্রথম মাসের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনলাম, ভাই-বোনের খবর নাই, (সত্য বলতে আমার বাড়ির কথা মনেই ছিলোনা তখন) দ্বিতীয় মাসে দেখি দোকানের মালিকের হিসেব মিলেনা, প্রত্যেকদিন খাতায় হিসাবে গড়মিল হয়, তিনি আমাকে সন্দেহ করতেন, কিন্তু আমি ওনার ১ পয়সাও চুরি করিনি, এইসব দেখে সেখান থেকেও চাকরি ছেড়ে দিলাম, তিনি আমাকে কিছুই বলেননি, তবে চাকরি ছাড়াতে তিনি মনে কষ্ট পেয়েছে হয়তো, আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলামনা, বিদেশে যাবো বলে চাকরিটা ছেড়েছিলাম, বিদেশ যাওয়ার কথাটা মিথ্যে ছিলো, কারন আমার আর অপবাদ সইতে ভালো লাগছিলোনা, ২০১১ সাল ছিলো সেটা, তারপর পনেরো-বিশদিন বাড়িতে থেকে আবার ঢাকায় গেলাম, আলম মামা আমাকে দেখে বলেন আমি যেন ১ বছর ঢাকায় না থাকি, আমি যেন অন্য কোথাও চলে যাই, তিনি আমার সাথে অনেক বাজে আচরণ করলেন, তারপর কয়েকটা দোকান পরেই আরেকটি ইলেকট্রিক দোকান ছিলো রাসেল ইলেকট্রিক সেই দোকানে গিয়ে দোকানের মালিককে সব বললাম, তিনি সব শুনে বললেন তার দোকানে থেকে কাজ করতে, (দোকানের মালিকের নাম আলী, আমি ওনাকে কাকা বলে ডেকেছিলাম, আলী কাকার বাড়ী ঢাকাতেই, বাহিরে কোন কাজ পড়লে করার জন্য বলেছেন তিনি) তবুও আলম সাহেব এসে জামেলা করেতেন, (আলম মামা ৫ ওয়ক্ত নামায পড়তেন ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত ভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে পারেনি, এখনো পারেনি), আমার জন্য রাসেল ইনেকট্রিক এর মালিক তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর তিনি আমাকে তার সাইড কুড়িগ্রামে পাঠালেন, সেখানে আমি ১৯ দিন কাজ করেছিলাম, ১৯ দিন পর ঢাকায় আসলাম, তাও আলম সাহেবের একই কথা আমি ঢাকায় থাকতে পারবোনা, তারপর নিরুপায় হয়ে দারোয়ানের চাকরি নিলাম, ১০-১২দিন যেতে না যেতেই ইজ্জত সন্মানে টানাটানি শুরু হলো, লজ্জা করে আমার, এর মধ্যে শুনি রাসেল ইলেকট্রিক এর মালিক দোকান ছেড়ে দিবেন তার মেয়ের বিয়েতে টাকা লাগবে। ভাবলাম দোকানটা আমি নেবো, তখন মাত্র ৫৫ হাজার টাকা লাগবে বলেছিলো, আমি আমার বাড়িতে বললাম আমার মায়ের কাছে, মা বলেছে বিয়ের না করার আগে কোন ব্যাবসা করতে দিবেনা, তারপর বিদেশে যেতে চাইলাম তাও একই কথা বললেন, (আমাদের কিছু জায়গা জমি আছে সে জন্যেই বলেছিলাম দোকান নেওয়ার বিষয়ে, মা কখনোই জায়গা-জমি বিক্রি করতে চায়নি এখনো চায়না), কোন উপায় না পেয়ে বিয়ে করলাম, ২০১২ সাল ছিলো আমার বিয়ের বছর, সত্য বলতে তখনও আমি কিছুই বুঝিনা, ২০১৩ সালে ঢাকা আদাবর দোকান দিলাম, দোকান দেওয়ার কিছুদিন পর বাড়িতে আসছিলাম ট্রেনে করে, পকেটে দুইটা মোবাইল সামান্য কিছু টাকা, ট্রেনে এক মুরুব্বি ছিলেন আমার পাশের সিটে, তাকে দেখতে একজন আলেমের মতই লাগলো, কিন্তু লোকটি আমার জীবনটাই শেষ করে দিলো, তিনি আমাকে চানাচুর খেতে দিলেন, আমি খেয়েছিলাম, কারন লোকটিকে দেখে মনে হয়েছিলো তিনি আল্লাহর খাটি বান্দা, সেই চানাচুর খাওয়ায় পর আমি কিভাবে বাড়িতে এসেছি আমি যানিনা (এটা ১০০% সত্য আল্লাহ তায়ালা এবং আমার দুই কাধের ফেরেস্তারা সাক্ষী আছেন) আমি এসেছিলাম আমার শশুর বাড়িতে, কয়দিন আমার হুস ছিলোনা আমি যানিনা, তবে কেউ আমাকে বিস্বাস করেনি, আমি সুস্থ হওয়ার পরেও যখনি বলেছি কেউ বিস্বাস করেনি, তবে এটাই সত্য, আমি সেই পাগল অবস্থায় আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলাম, তাকে নিয়ে দোকানের ভিতরে ছিলাম, আমার দোকানে বসে তাতাল দিয়ে আমার হাত পুঁড়ে ফেলেছিলাম, আমি সত্যিই কিছুই বুঝিনি কিভাবে এসব করলাম, কেন করলাম, হাত পোঁড়ার দুই-তিনদিন পর আমার কিছুটা জ্ঞান আসলো, আমি সত্যিই আজ খুবই চিন্তিত, (আজ ১৮/০৪/২০২০, গত ১০-১৫ টি বছর কিভাবে কাটিয়েছি কিছুই জানিনা, কেনইবা এই দুনিয়ায় এসেছি, কেনোই বা এখনো এই দুনিয়ায় রয়েছি,) এবাবে ছয়-সাতমাস এলোমেলো ব্যবসা করার পর আমার সেই দুলাভাই আমার মাকে বললেন, তিনি আমাকে বিদেশে নিবেন, আমাকে আমার দোকান ছেড়ে দিতে, আমিও পাগলের মত আমার দোকান ছেড়ে দিলাম, একদিনের ভিতরেই দোকান ছেড়ে দিলাম, এডভান্স ছিলো ৮০,০০০ টাকা, ১ টাকাও পাইনি, দোকান ছাড়ার নিওম ৩ মাস আগে বলে রাখতে হবে, নিওম অনুযায়ী কিছুই করতে পারিনি তাই এডভান্সের টাকাটা পেলামনা, যাইহোক বিদেশে গেলে কিছুতো একটা করতে পারবো সমস্যা নেই এই ভেবেই সব করেছি, সাঁতদিনের মধ্যে বিদেশে নিয়ে যাবে বলেছিলো আমার দুলাভাই, কিন্তু সাঁত বছর কেটে গেলো এখনো বিদেশে যেতে পারিনি, এর মধ্যে আরো কয়েকবার ব্যাবসা দিয়েছিলাম, বিদেশের জন্যে লাইন দিয়েছিলাম, কিন্তু কোন রকমের সুযোগ করতে পারিনি, এখনো পর্যন্ত বেকার, যাইহোক এখন কি আর করবো, কোন রাস্তাতো আর নেই, (কেউ আমাকে কখনোই সাপোর্ট করেনি, সবাই বলেছে আমার দোষ, আমিতো আমার কোন দোষ দেখছিনা, পরিস্থিতি আমাকে এমন করে দিচ্ছে, আমার জায়গায় আপনি হলে কি করতেন কমেন্ট করে যানবেন) আবার ঢাকায় গেলাম, রাসেল ইলেকট্রিক বিক্রি হলো, আমাদের মুমিন ভাই সেটা কিনলেন, তার দোকানের নাম এখন শিকদার ইলেকট্রিক, তিনি সত্যিই আমার অনেক উপকার করেছেন, মুমিন ভাইয়ের বাড়ি বরিশাল, আমার বাড়ি নোয়াখালী, এখানে নোয়াখালীর অনেক লোক ছিলো, কিন্তু কেউই আমাকে সহযোগিতা করেনি, আমার মামারা পর্যন্ত আমাকে সহযোগিতা করেনি, তারাও ঢাকায় ছিলো, তারা সবাই আমাকে বলতো আমাকে দিয়ে কিছুই হবেনা, আপনারাই বলুন আমাকে দিয়ে এই পরিস্থিতিতে কি হতে পারে? কেউতো আমাকে সঠিক কাজে লাগাতে পারেনি, আমি কিভাবে কিছু করতে পারি? যাইহোক ঢাকার শহরে যদি কেউ আমার উপকার করে থাকেন তবে তিনি হলেন মুমিন ভাই, শুধু ঢাকার শহরে নয় তিনি আমার বাবা মারা যাওয়ার সময়ও আমাকে টাকা দার দিয়েছেন, তিনি আমাকে খাইয়েছেন, তিনি আমাকে তার বাসায় থাকার জায়গা দিয়েছেন, তিনি আমার আত্বীয় স্বজন সবার উপরে, তিনি এখনো আমার কাছে টাকা পাবেন, যাইহোক নভেম্বর-২০১৭ তে সোনাইমুড়ী মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান দিলাম, এখানে এসেও খেলাম ধোঁকা, আমার কম্পিউটার খারাপ হলো, ঠিক করতে নিয়ে গেলাম সাকসেস কম্পিউটারে রাকিব রায়হান এর কাছে, এটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল, আমার কম্পিউটার খুলে আমাকে বসিয়ে রেখেছে, আমাকে সেখানে দেখে পাশের দোকানদারেরা আমাকে ডেকে জানতে চাইলো আমি এখানে কি করছি, আমার কথা শুনে সবাই আমাকে বললো রাকিব নাকি কম্পিউটারের ভালো পার্টসগুলো খুলে রেখে দেয়, এই ভয়ে আমি আর কোথাও যাইনি সেখানেই বসে ছিলাম, সন্ধ্যা হয়ে এলো, আমি বসেই আছি, হঠাত করে সে দোকানের সাটার বন্ধ করে দিলো, আমি জানতে চাইলে সে বলে সমস্যা নেই, আপনি বসেন আমি ঠিক করে দিচ্ছি, ৩০০ টাকা চাইলো আমার কাছে, আমি বললাম টাকা সাথে নেই আমার, দোকানে গিয়ে আনতে হবে, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সাটারে কেউ বাড়ি মারলো, পরপর কয়েকবার, আমি সাটার খুলতে গেলাম, সে খুলতে দিলোনা, বলছে তার বাবা এসেছে, কিছুক্ষণ পর বললো আমার বাবার সাথে রাগ করেছি, তিনি আমার সব টাকা নিয়ে যান, সে তার বাবার ডাকে একটিও জবাব দেয়নি, আমাকেও কোন জবাব দিতে দেয়নি, তার কিছুক্ষন পরে সে একটি বক্স বের করলো, এরমধ্যেই তার বাবা চলে গেছেন, সে বক্স থেকে কয়েকটি লালছে ট্যাবলেট বের করলো, সিগারেটের প্যাকেটের ভিতরের যেই সাধা জিনিসটা থাকে তার উপর একটা ট্যাবলেট দিয়ে নিছে গিয়াস লাইটের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে একটা পাইপ দিয়ে সিগারেট এর মত খাচ্ছে, আমাকেও খেতে বলছে সে, আমি খেতে চাইনি, সে কয়েকবার বলার পর আমি অল্প কিছুটা খেয়েছিলাম, তারপর আমার কম্পিউটার ঠিক করে দিলো, আমি চলে গেলাম, পরের দিন আবার কম্পিউটারে সমস্যা, আজ নিতে চাইনি, আমি বলেছি আমার দোকানে এসে ঠিক করে দিন, সে ঠিক করতে আসলো বিকেল বেলা, এসে দেখলো, কিন্তু কম্পিউটার ঠিক হয়নি, সে আমাকে সহ কম্পিউটার নিয়ে গেলো তার দোকানে, আজও একই রকম হলো, রাকিবের বাবা ডাকছেন বহির থেকে, কিন্তু আমরা কেউই জবাব দিচ্ছিনা, আমি জবাব দিতে চাইছি কিন্তু তার নিষেদের কারনে দিতে পারিনি, আজ রাকিবের বাবা আমাকে দেখেছেন তাদের দোকানে ডুকবার সময়, আজ খাওয়ার পর আমার কাছে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে, আমি সেই দিন রাতে বাড়ি গিয়ে আমার মায়ের চুলের মূঠি চেপে ধরেছিলাম, যানিনা কেমন যেন হয়ে গেছি আমি, তারপর থেকে আমি রাকিবের ভালোর জন্য তার কাছে যেতাম, আমি তাকে এসমস্ত খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে চাইছিলাম, রকিব প্রত্যেকদিন আমার সাথে প্রতিজ্ঞা করতো সে আর কখনোই এগুলো খাবেনা, কিন্তু সে আমার অজান্তে খায়, আমি তার দোকানে গেলেই গন্ধ পাই, আমি তারপর তার সাথে রাতে ১০-১২ দিনের মত ছিলাম, তাকে আমি বুঝানোর চেষ্টা করতাম, মাঝেমধ্যে খেতাম, রকিব খেতো তার সাথে আমিও একটু একটু খেতাম, আমি রাকিবের বাবাকেও বলেছি এ বিষয়ে, তিনি আমাকে খারাপ ভাবতেন, আমি কখনোই কারো খারাপ চাইনি, কখনোই কারো ক্ষতি করিনি, কখনোই অন্যের কিছু চুরি করিনি যা আমি বলছি তা ব্যতিত, কিন্তু অনেক মানুষ আমাকে নিয়ে অনেক বাজে মন্তব্য করেছেন, আমি বলবো যার যা ইচ্ছা সে তাই ভাবুক, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আছেন, আর তিনিই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক, তিনি বিচার করবেন, আমি কিছুই বলবোনা কাউকে, আর যা কিছু আমি করেছি তার প্রমান আমি দিয়েছি, তার কিছুদিন পর দোকান ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় গেলাম, S-2 4th ফ্লোরে কাজ করেছিলাম, বাসা পাল্টানোর কাজ প্রায় অর্ধেক দিন লেগে গেছে, পশ্রাবের চাপ শুরু হলো, ওই বাসায় মহিলা ছিলো বলে তাদের ওয়াশরুম ব্যবহার করিনি, লাজ্জা লাগে, দ্রুত কাজ শেষ করে নিছে এসে দারোয়ানের বাথরুম খুজতেছিলাম, দারোয়ানের রুমে ঊঁকি দিয়ে খুজলাম, না পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি, মেইন গেইট পার হবো এমন সময় দারোয়ান সামনে দাড়ালো পুলিশের মতো, তাকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম, হাতে যন্ত্রপাতি ছিলো তাই আর বলিনি, কিছুক্ষন পর পস্রাব করে এসে শুনি দারোয়ান বলে গেছে আমি যেন সেই বাসায় আর কোন কাজে না যাই, আমি নাকি চুরি করার জন্যে তার রুমে গিয়েছিলাম, তাকে দেখে আমি চুরি করিনি, কথাগুলো শুনে আমি তাকে বলতে গেলাম, সে আমার কথা শুনতেই চাইলোনা, সে আমাকে গালিগালাজ করেছিলো, আমি আর কিছুই বলিনি তাকে, আমি শুধু কান্না করে আল্লাহর কছেই বলেছিলাম, আল্লাহর কাছে আমার একটাই প্রশ্ন তিনি কেন আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? তিনি কেন আমাকে এতো অবহেলা করছেন, আমিতো কোন অন্যায় করছিনা, তিনি কেন আমাকে এতো শাস্তি দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে কি করবো কিছুই যানিনা, আল্লাহ তায়ালা আমার কপালে আর কি কি দুর্ভোগ রেখেছেন সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।। আমি দুঃক্ষিত আমার ভাই বোনদের জন্য কিছু করতে পারিনি বলে, আমি দুঃখিত আমার বাবা মায়ের জন্যে কিছু করতে পারিনি বলে, তবে সর্বক্ষন চেষ্টা করেছি, কিন্তু এমন কোন সুযোগ পাইনি,
ধন্যবাদ সবাইকে।।
""" কিছু প্রয়োজনীয় কথা"""
১) আপনারা যারা বাবা-মা আছেন, তারা অবশ্যই সন্তানের ইচ্ছা সম্মন্ধে জানতে চাইবেন।
২) চোট থেকেই বাচ্ছাদেরকে সঠিক শিক্ষা দিন।
৩) অবশ্যই ৫ ওয়াক্ত নামাজ শিক্ষা দিন, এবং পরকাল সম্মন্ধে সঠিক শিক্ষা দিন।
৪)মুরুব্বিদের সন্মান করতে শিখান।
৫) দয়াকরে মা-বাবা ভাই-বোন নিয়ে বসবাস করুন, এতে আপনার সন্তান খুব সহজেই সঠিক শিক্ষা পাবে।
৬) আপনার সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন দিবেননা, এতে আপনার সন্তানের চোখ এবং মস্তিষ্ক ভালো থাকবে।
৭) বাচ্ছাদের সম্মুখে কখনো খারাপ কথা বলবেননা, কড়া ভাষায় কথা বলবেননা
৮) টেলিভিশন নাছ-গান এসব কিছু থেকে দূরে রাখবেন, আদর দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, এতে আপনার সন্তান মাথায় উঠবেনা।
আমার জন্ম ৫/১২/১৯৯২
আমার বয়স যখন ৪-৫ বছর, তখন আমি এবং আমার চোট বোন মাদ্রাসায় পড়তাম, মাদ্রাসায় আমাদের যা কিছু পড়াতো তাই আমরা বাড়িতে এসে দাদাকে বলতাম। সময়টা অনেক আনন্দের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো,
প্রায় চার-পাঁচমাস মাদ্রাসায় পড়ার পর আমাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন আমাদের মা, তখন আমার বাবা ছিলেন জাহাজে, আমার বাবা জাহাজে চাকরি করতেন, এরমধ্যে মা আমাদের কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন, স্কুল ছুটি হলে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন, স্কুল আমাদের বাড়ির কাছাকাছি, ৫-৬ টা বাড়ি দুরত্ব ছিলো। যাইহোক সেই সময়গুলো সত্যিই অনেক সুন্দর ছিলো, পাখি গান করতো, আকাশে কত রকমের তারকা ছিলো, চাঁদের আলোটা অনেক সুন্দর ছিলো। মা চাঁদ মামার গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো। কারো সাথে মিশতে দিতোনা, তাছাড়া মেশার মত কেউ ছিলোনা বললেই চলে, স্কুলেও কারোর সাথে মিশতে পারতামনা, কারন স্কুল ছুটি হওয়ার আগেই মা গিয়ে দাড়িয়ে থাকতেন, ক্লাশ ওয়ানে আমার রোল নং ছিলো ৪৮ আমার বোনের ৪৭, ক্লাশ টু-তে উঠলাম, রোল নং ১৭, ন্যায় অন্যায় কিছুই বুঝিনা তখন, ক্লাশ থ্রি-তে উঠলাম যখন তখনি আমার জীবনে এলো কঠিন এক মিথ্যে- (ক্লাশ থ্রী-তে আমার এক কাকা ফেল করতে করতে রয়েগেছে, বয়সে আমার ৩-৪ বছরের বড় হবে, তার নাম মনু, সে আমাকে ফুসলিয়ে দোকান থেকে ২৫ পয়সার লজেন্স ২টা ৫০ পয়সা, তার জন্য একটা আমার জন্য একটা বাকিতে কিনিয়েছে আমার নামে, ভয়ে মাকে বলতে পারিনি, মা যদি বকা দেয়, বা কিছু বলে, যাইহোক ২-৩ দিনপর দোকানের মালিক ক্লাসে এসে হাজির তার ৫টাকা দিচ্ছিনা কেন? আমিতো ঘাবড়ে গেলাম একি কি বলছে সে, ওই কাকাটাও একই কথা বলছে, আমি বলছি খেলাম ৫০ পয়সা, তারা বলছে ৫টাকা এইবার কি করি আমি, ভয়ে মাকে ৫০পয়সার কথা বলিনি এখন যদি শুনে ৫ টাকা কি করবে আল্লাই ভালো জানে। ভয়ে পরেরদিন স্কুলে যাইনি, এদিক সেদিক পালিয়ে যাচ্ছি, দাদা দাদির কাছে গিয়ে ঘুমাচ্ছি, দুইদিন কেটে গেলো স্কুলে যাইনি, পরদিন সকালে মা আটার রুটি বানিয়েছিলো সকালের নাস্তা, ঘরে ইঁদুর মারার ওষোধ ছিলো, আমি কিছুটা ইঁদুর মারার ওষুধ রুটিতে মেখে নিয়েছি খেয়ে মরে যাবো বলে, কিন্তু খেতে পারিনি, মা আমাকে তাড়া করছিলো স্কুলে যাওয়ার জন্যে, আমি এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছি রুটি হাতে, আর ভাবছি আমি কি এই রুটি খাবো নাকি খাবোনা, যাইহোক দৌড়াদৌড়ি করার কারনে রুটিতে ময়লা লেগে গেছে তাই আর রুটি খাওয়া হয়নি, (আমি মরে যেতে চাইছি কারন পৃথিবিতে সত্য নেই বলে) তার কয়েক মাস পরে এলো রমজানের ঈদ, ঈদে চোট ফুফুর বাড়িতে গেলাম, ফুফুর বাড়িতে গিয়ে দেখি তাদের দরজার নিছে কয়েকটা ৫ টাকার নোট পড়ে আছে, ১০-১৫ টাকা ছিলো সেখানে তারমধ্যে ১টা নোট ছিলো চেড়া, আমি সেগুলো নিলাম, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা শার্ট পড়ে আছে দরজার উপরে, মনে হলো শার্টে আরো টাকা থাকতে পারে, তখন আমার মনে শয়তান ঢুকেছিলো মনে হয়, শার্টের পকেটে দেখলাম আরো ৩০-৪০ টাকার মত আছে, সেটাও নিয়ে নিলাম, মোট ৫০-৫৭ টাকা হলো সেখানে, যাইহোক আমি ২ টাকার চুইংগাম কিনেছিলাম, চেড়া ৫ টাকার নোটটা রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলাম, বাকিটা মেজো ফুফুর বিছানার নিছে রেখেছিলাম, কাউকে কিছুই বলিনি, কারন স্কুলে গেলে কিছু খেতে পারবো, চোট ফুফুর বাড়ি থেকে গেলাম মেজো ফুফুর বাড়িতে, সেখানে রাত্রে থাকার জন্য ফুফু রেখে দিলো, সকালে ফুফাতো বোনের সাথে বাড়িতে আসার কথা বলল, ফুফুর কথা মত আমি থেকে গেলাম, রাতে চোট ফুফু পাগলের মত এসে হাজির মেজো ফুফুর বাড়িতে, আমাকে নেওয়ার জন্যে, আমি চোট ফুফুর সাথে গেলাম, আমাকে রাতের খাওয়ার সামনে দেওয়া হলো, লালশাক দিয়ে, আমি ভাত মুখে নিলাম, এমন সময় আমার চোট ফুফু বলে উঠলো আমি টাকা নিয়েছি কিনা, আমিতো লজ্জায়-ভয়ে স্বীকার করছিনা, কাঁদছিলাম, এরমধ্যে মেজো ফুফুর মেয়ে বড়োটা এলো তার নাম মৌসুমি, এবং বলতে লাগলো চাউল পড়া এনেছে আমিতো আরো ভয় পেয়ে গেলাম, তারা বলছে চাউল পড়া খেলে রক্ত বমি হয়ে মানুষ মারা যায়, আমি ভয়ে বলেছি টাকা নিয়েছি, কিন্তু কিভেবে নিয়েছি সেটা বলিনি, এবং কোথায় রেখেছি সেটা বলেছি, মৌসুমি আপা তাদের বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়ে আসলো, সেইদিন থেকে ফুফুদের চোখে আমি চোর হয়ে রইলাম, তার কয়েক মাস পর আমার সেজো ফুফু কহিনুর এলো আমাদের বাড়িতে বেড়াতে, ফুফুর কি যেন হারিয়ে গেছে, আমি আমাদের গাব গাছে উঠে গাব পাড়ছিলাম, সেজো ফুফু আমাকে গাছ থেকে নামিয়ে আনলো চোর বলে, একটা থাপ্পড় মেরেছিলো আমাকে, আমি বললাম আমি নেইনি, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুফু তার হারানো জিনিস পেয়ে গেছে, তিনি রেখেছেন এক জায়গায় খুঁজেছেন অন্য জায়গায়, আমাকে চোর বলার কারন ঐ একটাই (চোট ফুফুর বাড়ির ঘটনাটার কারনে), তারপর থেকে আর কোন ফুফুর বাড়িতেই যাওয়া হয়নি, গেলেও তাদের প্রয়োজনে গিয়েছি, কিন্তু সত্য বলতে পারিনি আজো, আজ আমার জীবনের কিছু কথা আমি সবাইকে বলবো, যেগুলো আমাকে সবসময় ভাবায়, এজন্যই বলবো কারন আমরা মিথ্যের মধ্যে আছি, আমার জীবনি পড়ে আপনারা দয়াকরে সত্য বলুন, সত্যই মানুষের আসল বন্ধু, তারপর ক্লাস ফোর এ উঠলাম আমার রোল নং ৯, (ক্লাশ থ্রিতে রোল নং ছিলো ১৬) আমরা বেশ ভালোই আছি তখন, মা আমাকে আর আমার বোনকে ঘরের বাহির হতে দিতোনা, তালা মেরে ঘরে রেখে বাহিরে যেতো, কারো সাথেই মিশতে পারিনি, কোন বন্ধু বান্ধব নেই আমার, ক্লাশ ফাইভে উঠলাম তখন আমরা নতুন বাড়িতে আসছি, সেটা ছিলো ২০০২ সাল, তখন আমার পড়ালেখায় অমনোযোগ শুরু হয়েছে, কারন নতুন বাড়ি, নতুন মানুষ, সময়টাই ভিন্ন, যাইহোক কোন রকমে ক্লাস ফাইভ পাস করে আসলাম, এইবার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন একাডেমিতে ভর্তি করালো ক্লাস সিক্স এ রোল নং ৮৩, বাবাও চাকরি রিজাইন দিয়ে চলে এসেছে তখন, আমাদের সংসারে অভাব শুরু হতে যাচ্ছে, কারন নতুন বাড়ি, নতুন ঘর, সবকিছুই নতুন, তারমাঝে বাবার চাকরি ছেড়ে দেওয়া, অভাব তো না চাইলেও আসবে, অভাব অনটনের মাজে পড়ালেখা ভালো লাগেনা, সেভেন এ উঠলাম, রোল নং ২১, কষ্ট করে ক্লাস এইট এ উঠলাম, রোল নং ৩৩, দ্বিতীয় পরিক্ষা দিলাম, এমন সময় সংসারে অবস্থা পুরাই খারাপ, ভাই-বোন নিয়ে বাবা-মা খুব কষ্ট করে, পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া পাইনা, জামা কাপড় নেই, অনেক কষ্ট, বাবা আমাকে টেইলরের দোকানে দিলো, দুইদিন যাওয়ার পর দেখি তারা পয়সা ছুড়ে মারে গায়ের দিকে, (মনে হলো আমাকে পরিক্ষা করে তারা) তারপর আর যাইনি সেই কাজে, কিছুদিন পর দিলো নান্দিয়া পাড়া বাঁধন টেইলারে, ৪-৫ দিন পর তাদের মালিক পরিবর্তন হয়েছে, দোকান তেমন খোলেনা, তাই আর যাওয়া হয়না, কিছুদিন পর দোখান খুললো আমিও কাজে যেতে লাগলাম, কিছুটা সেলাইয়ের কাজ শিখলাম, লুংগি ছায়া ব্লাউজের বোতামের গাই করা, প্যান্টের নিছের সাইডের হাতের কাজও শিখেছিলাম, টাকা পয়সা কিছুই দেয়না, তারপর দেখি কাজ শিখায়না চা-টা আনায় আমাকে দিয়ে, তাই এই কাজটিও ছেড়ে দিলাম, এদিকে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ, বাবা মায়ের গায়ে হাত তোলেন, সংসারে অভাব থাকলে মনেহয় এমনি হয়, কিছুদিন পর বাবা দিলেন টেম্পুর হেল্পারি করতে, দুই-তিনদিন পর থানা থেকে পেট্রোল ডিউটিতে গেলাম, আমি পুলিশদের সাথে বসেছিলাম টেম্পুর ভিতরে, পুলিশকে আমার বাবার বিষয়ে বললাম, পুলিশরা আমাকে কিছুই রিপ্লাই দেয়নি, তারপর বাবা মায়ের কাছে কথাগুলো বললাম, আমি পুলিশদের যা যা বলেছিলাম, মা-বাবা ভয় পেয়ে গেলেন, আমার যেন কোন ক্ষতি না হয়, তারপর আর টেম্পুতেও যাইনি, এরপর কিছুদিন কেটে গেলো, অভাব আরোও বাড়তে লাগলো, (এদিকে বাবা আমাকে বিয়ে করানোর কথা ভাবছেন, আমার জন্যে মেয়েও দেখেছেন তিনি)সেই যে মনু কাকা ছিলো, তার মা একদিন আমাদের বাড়িতে এলেন আমাদেরকে দেখতে, আমাদের কষ্ট দেখে তিনি তার ভাইয়ের দোকানে আমাকে চাকরি নিয়ে দিলেন, (জসিম ভাই, রামপুর-তালতোলা) বেতন নিয়ে মা-বাবাকে কিছু বলেছে কিনা আমি যানিনা, আমি চাকরি করতে চলে গেলাম, সেখানে দুই-তিনমাস চাকরি করলাম, সেখানে একটা মেয়ে ছিলো, মেয়েটি সম্পর্কে আমার ভাগ্নি হয়, সেই ভাগ্নির ফুফাতো ভাই বোর্ডিং থেকে এলো (তার নাম হাডারি), সে আমাকে দেখতে পারতোনা, সে ভাবতো সেই ভাগ্নির সাথে আমার প্রেম-ট্রেম কিছু থাকতে পারে, তাই সে আমার সাথে একদিন মারামারি করলো, মারামারির বিষয়টা কাউকে বলিনি, মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো বাড়ি আসার জন্য, বাড়ি আসতে পারছিনা, আমি পথঘাট চিনিনা, কিযে করি কিছুই ভালো লাগছেনা, তারপর একদিন ঐ দোকান থেকে ১৫০ টাকা চুরি করে বাড়িতে চলে এসেছি, এরমধ্যে তারা আমার মা-বাবাকে কোন টাকা পয়সা দেয়নি, মানে আমার বেতন ধরেনি, যাইহোক তারা খবর নিয়ে জানতে পারলো আমি বাড়িতেই এসেছি, তিন-চার দিন পর আমার মেজোমামা নিয়ে গেলেন ওই দোকানে, এই আশায় যে যদি সেই দোকানের মালিক আমাদেরকে কিছু দেন তো আমার মা-বাবা ভাই-বোন কিছু খেতে পারবে, দোকানের মালিক কিছু মুদি মাল দিয়েছিলেন, তবে আমায় কোন বেতন দেয়নি, আরো মাস দুয়েক চাকরি করে চলে এসেছিলাম, সেখানে আর যাইনি, তারপর বাবা আমাকে দিলেন রিক্সার মেকানিক শিখতে, প্রথম দিন বেশ ভালোই কাজ করেছি, অনেক কাজ ছিলো, অনেক রাত হয়ে গেছে কাজ করতে করতে, বাড়ি আসতে পারিনি, রিক্সার মেকারের সাথে তার বাড়ি নিয়ে গেলো, রাতের খাওয়ার খেয়ে শুতে গেলাম, এমন সময় তার ছেলে ঘুম থেকে উঠে আমার সম্মন্ধে জানতে চাইলো তার বাবার কাছে, তার বাবা আমার পরিচয় দিলো তাকে, তখনি ছেলেটি বলে উঠলো সবাই সাবধানে ঘুমাইয়েন বলা যায়না, হয়তো আমাদের কিছু ছুরি করে নিয়ে যাইতে পারে, ছেলেটির বয়স আমার চেয়েও কম ছিলো, এই কথা শুনার পর মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো আমি কি সত্যিই দেখতে এতোটা খারাপ, সেখানেও ১০-১২ দিন কাজ করলাম, দেখি কেউ টাকা পয়সা কিছুই দেয়না, সবাই শুধুশুধু কাজ করায়, আড়চোখে দেখে, তারপর বাবা পানির কল বসানোর কাজ করতো আমাদের গোষ্ঠীর এক জেঠার কাছে, আমাকে বাবা সেই জেঠার দোকানে কাজ নিয়ে দিলো, আমি দোকানে বসবো, টুকটাক বেচাকেনা করবো, কিন্তু জেঠা আমাকে দোকানে বসাতেননা তিনি তার বাড়িতে কাজ করাতেন, তার জালা উঠানো, জমি সাফ করা, ইত্যাদি, এগুলো কি আমার ভালো লাগে, চলে আসলাম কয়েকদিন পর, তার কয়েক মাস পর আমার বড়মামা এলেন চিটাগং থেকে, তিনি আমাকে চিটাগং নিয়ে গেলেন, তার শালার কম্পানিতে, সেই বছরেই কম্পানি খুলেছিলো তারা, মামা আর তার শালা মার্কেটিং করতেন দিনের বেলায়, রাতে এসে ওর্ডার অনুযায়ী প্রডাকশন দিতেন, কিছুদিন পর আমি নিজেই প্রডাকশন দিতে শিখে গেছি, যাইহোক সেখানেও দুই-তিনমাস কাটলো বেশ ভালোই, এখানে আমি একাই সব কাজ করি এখন, আরো দুই-তিন মাস পর আমাদের গ্রামের দুটো ছেলে এলো এখানে, (নানার বাড়ির সয়েল আর মোল্লা বাড়ীর মাছুম), তাদেরকে দেখে আমি খুবই আনন্দিত, তাদের সাথে ঘুরতে যেতে পারি, ভিবিন্ন কথা শেয়ার করতে পারি, মনটা একটু ভালো থাকতো তখন, তবে তাদের দিকে তাকালে আমার বাড়ির কথা মনে পড়তো, কিছুদিনের মধ্যে তাদেরকে কিছু কাজ শিখিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে এলাম, আমাকে ১০০০ কিংবা ১৫০০ টাকা দিয়েছিলো গাড়ি ভাড়ার জন্যে, আমি বেতনের কথা কিছুই জানতে চাইনি, কারন এখানে আমার আপন মামা আছেন, তিনি অবশ্যই আমার মা-বাবাকে টাকা পয়সা দিয়েছেন ভেবে নিয়েছি, বাড়িতে এসে পাঁচ-ছয়দিন থেকে আবার চলে গেলাম, গিয়ে দেখি মামা বাড়িতে আসছেন আজকেই, আমি গিয়ে পৌছানোর আগেই মামা বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন, (কিছুকথা না বললেই নয়- আমাদের পাশের বাসায় একজন আন্টি ছিলেন, তার একটি মেয়ে ও একটি ছেলে আছে, মেয়েটির বয়স ১৮-১৯ হবে, ছেলেটির ৭-৮ বছর হবে হয়তো, ওই আন্টির স্বামী থাকতেন সৌদি আরব, ওই আন্টির সাথে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো, আমাকে তিনি ছেলের মত আদর করতেন) যাইহোক, আমি বাসায় যাওয়া মাত্রই সহেল আমাকে ডেকে বললো তারা নাকি দেখেছে আমার মামা সেই আন্টির সাথে শুয়ে ছিলো, তারপর তারা প্রমান করেছে মামার সাথে ওই আন্টির খারাপ সম্পর্ক আছে। (আমি বাড়িতে থাকতেই তারা দেখেছিলো) তার কিছুদিন পর তারাও চাকরি ছেড়ে চলে গেলো, আবার আমি একা হয়ে গেলাম, ওইসব কথা শুনার পর আমি আর আন্টিদের সাথে তেমন একটা মিশিনি, তারপর আসলো আরেকটি ছেলে, তাও সে মামার শালার গ্রামের, সে আমার মামাতো ভাইকে চেনে, এবং ভিবিন্ন কথা বলে আমার সাথে মিশলো, আমি তাকে আমার নিজের মায়ের পেটের ভাই ভেবেছিলাম, তার কষ্ট হলে আমিও কষ্ট পেতাম, তাকে আমি সবকিছু খুলে বললাম, এবং সতর্ক করলাম, ওই আন্টির কাছে যেন না যায়, তারপর একদিন আমি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি, তখনো আমাকে বেতন দেয়নি, ১০০০-১৫০০ টাকাই দিলো, তিন-চারদিন থেকে আবার গেলাম, এইবার দেখি সবাই আমার সাথে উল্টো পাল্টা আচরন করছে, কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছিনা, সবাই আমাকে ভয় দেখাচ্ছে বড় মামা আসলেই বুঝাবে সব, (ওই ছেলেটা আমার বলা কথাগুলো সবাইকে বলে দিয়েছে, সবাই আমাকে মনেমনে খারাপ ভাবতে লাগলো এই ভেবে যে আমি এতো চোট একটা বাচ্ছা কিভাবে এতো কিছু বুঝি, তাই সবাই আমাকে ঘৃনা করতে লাগলো, সত্য বলতে আমি কিছুই বুঝিনি, সহেল আমাকে বলেছিলো বলেই আমি তাকে এসব বলেছিলাম) মামা তখন বিদেশে যাবেন, তাই কাজে ঢাকায় ছিলেন, আমাকে কেউই কিছু বলেনি, এরমধ্যে ওই ছেলেটিও চাকরি ছেড়ে চলে গেলো (ছেলেটির নাম রিপন), আসলো আমার মামার খালাতো ভাই, তাও আবার ম্যানেজার পদে, তিনি আমাকে নিয়ে ব্যাংকে টাকা তুলতে যেতেন, মালামাল কিনতে যেতেন, তিনি ব্যাংকে টাকা তুলে সেখান থেকে চুরি করতেন, আমি কিছুই বুঝতামনা, এইরকম একদিন উনি ছিলেন না, আমাকে ব্যাংকে পাঠালেন আমি টাকা তুললাম, দেখলাম ৫০০টাকা বেশি, আমি ভাবলাম আমার গনায় ভুল হচ্ছে, আমি কয়েকবার টাকাটা গুনলাম, দেখি ৫০০টাকা বেশি আছে, ৫০০টাকা আমার কাছেই রেখে দিলাম, তারপর মামার শালাকে টাকা দিলাম, তিনি বললেন ৫০০৳কম কেন, আমি বল্লাম এটাই দিয়েছে ব্যাংক থেকে, (লজ্জায়- সত্য বলতে পারিনি) তারপর তিনি আমাকে আবারো ব্যাংকে পাঠালেন, আমি সেই টাকাটা আবার একসাথেই রাখলাম, ব্যংক ম্যানেজার টাকাটা গুনে ৫০০টাকা রেখে দিলেন, আমি চলে এসেছি, তারপর সোজা চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছি, কিভাবে মুখ দেখাবো যানিনা, কিন্তু সত্য বলতে পারিনি, তারা ভাবছে আমি চোর, তারা ভাবছে আমি তাদের অনেককিছু চুরি করেছি। (কিন্তু আমি সত্য বলছি, আমার আল্লাহ জানেন সবকিছু, আমি কিছুই চুরি করিনি, হ্যাঁ আমার বই পড়ার অভ্যেস ছিলো, আমি নাস্তা না খেয়ে নাস্তার টাকা দিয়ে বই কিনতাম, আমার গল্প পড়তে ভীষণ ভালো লাগতো) হয়তো সেই থেকেই বড় মামা আমাকে চোর ভাবতেন, বড়মামা এখনো আমাকে চোর ভাবেন, কিন্তু কেন চোর ভাবেন সেটা বলেনি, তার কিছুদিন পর মায়ের এক খালাতো ভাইয়ের টেম্পুর গ্যারেজে দিলো কাজ শিখতে (আজিম মামা), বেশ ভালোই কাজ শিখেছি কয়েক দিনে, টেম্পুর ইঞ্জিন ছাড়া আর সব কাজ একাই করতাম, সেখানেও তারা টাকা পয়সা দিতোনা, হঠাত একদিন বাড়িতে এলাম, মায়ের একটি বাটন ফোন ছিলো, তখন ভিডিও প্লে করা যায় এমন মোবাইল বের হয়েছে কেবল, তাও চায়না বাটনে, আমাদের বাড়িতে কারেন্ট নেই, আমরা কিছুটা দূরে একটি বাড়িতে গিয়ে মোবাইলে চার্জ দিতাম, মায়ের মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে দেখি ভিডিও প্লে করা যায় এমন একটি মোবাইল এক কোনায় পড়ে আছে, কিছুক্ষন বসে ভিডিও দেখলাম, হঠাত কারেন্ট চলে গেলো, ভাবলাম মোবাইলটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ভিডিও গুলো দেখি, পরে আবার মায়ের মোবাইল নিতে আসলে দিয়ে যাবো (আমার ভাবনাটা ১০০% সত্য ছিলো, আপনারা হয়তো বলবেন নিজেকে বাঁছানোর জন্যে বলছি)। বাড়িতে আসার পর মনটা আর মোবাইলটা ফেরত দিতে চাইছেনা, চলে গেলাম টেম্পুর গ্যারেজের কাজে, আমার বাড়িতে কেউ যানেনা, হঠাত করে খবর হলো মোবাইল পাচ্ছেনা তাদের, আমিতো সেখানে মোবাইল চালাচ্ছি উড়া দুড়া, টেম্পুর গ্যারেজ এর মালিক আমার বাড়িতে ফোন করে আমার মাকে জিজ্ঞাসা করেছে মনে হয়, ওখানে সবাই বুঝে গেছে এটা চুরি করা মোবাইল, এদিকে আমার মা বুঝতে পেরেছে মোবাইলটা আমিই নিয়েছি, আমি বাড়িতে আসলাম, আমাকে কেউই কিছু বলেনি, কেউ কিছুই বলছেনা, মোবাইলের মালিক হার মেনেছে মোবাইল হারিয়ে গেছে, হয়তো আর তার মোবাইল পাবেনা, (মোবাইলের মালিক মাসুম, আমার সাথে কাজ করা মাছুম) কিন্তু আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, আমি ভাবতে থাকলাম মোবাইলটা কিভাবে ফেরত দেওয়া যায়, আমি মাছুমের কাছে বল্লাম মামু মোবাইলটা ফেরত দিবো আমি, সে বললো ঠিক আছে তাহলে দোকানের দিকে নিয়ে আয়, আমি নিয়ে গেলাম, আমাকে তখন সবাই বললো মোবাইলটা কোথায়, আমি বের করে দিলাম মোবাইলটা, ঠিক তখনি আমাকে মাছুমের বড় ভাই মহিন একটা ঘুষি মারলো, আমি কিছুই বলিনি একে একে সবাই আমাকে মারলো, ওখানে প্রায় ৫-৬জন লোক ছিলো, সবাই আমাকে মেরেছে, (তবে কি এটাই মানবাতা? সত্য বলতে গেলে কি এমনি হয়? নিজেকে বোঝালাম এটা আমারি কর্মের ফল) আমাকে বেঁধে রেখেছে, আমার নানা ও মামাকে খবর দিলো, আমার নানা এসে আমাকে রড লাইট দিয়ে আমার মাথায় একটি বাড়ি মারলেন, (এটাই ছিলো আমার জীবনের শেষ চুরি, আর কখনো চুরি করিনি আজ পর্যন্ত) তারপর আর টেম্পুর কাজ করতে যাইনি লজ্জায়, কয়েক মাস পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম, (এটাই আমার জীবনের প্রথম ঢাকা ভ্রমন, ঢাকা যাবো বলে আমার নানি আমাকে মোবাইল কেনার টাকা দিয়েছিলেন, সেটাই আমার জীবনের প্রথম মোবাইল যেটিতে আমি ইন্টারনেট কানেকশন পাই, জাবা ছিলো মোবাইলটিতে, তবে মোবাইলটি পুরোনো কিনেছিলাম) ঢাকায় প্রথম কাজটা ছিলো মুদির দোকানে, সেখানে দশ-বারোদিন যেতে না যেতেই দেখি তারা আমার সাথে জামাই আদর করে (তাদের একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে ছিলো, আমার মনে হলো তারা আমার সাথে মেয়েটির বিয়ে দিবে) তারপর আমার বাড়িতে আলাপ করলাম, শুনলাম আমার বড় বোন ঢাকায় থাকে, আমার দুলাভাইয়ের দোকান আছে ঢাকায়, আমি নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করে দেখা করলাম, তারপর চাকরি ছেড়ে ওখানে চলে যাই, বোনের কাছে গিয়ে আরো বিপদ আসলো আমার জীবনে (আমি বাসি খাওয়ার খাইনা, কারন আমার মা কখনো খাওয়ানি, ফ্রীজের খাওয়ার ও খাইনা কারন আমার মা খাওয়ায়নি) এখানে সব খাওয়ার বাসি আর প্রায় পছা, খেতে পারতামনা কিছু বলতেও পারতামনা, এখানে ছিলো ইলেকট্রনিকস কাজ, দুলাভাই ফ্রীজের মিস্ত্রি ছিলেন, তিন-চারমাস পর বাড়িতে এলাম, (আমার পাশের বাড়ির জেঠাতো বোন আমাকে বলেছে আমার পছন্দের একটি মেয়ে আছে, যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, মাদ্রাসায় পড়ে, পর্দা করে, তখন আমি সেই মেয়েটিকে দেখতে যাই আমার জেঠাতো ভাইয়ের সাথে, আমি মেয়েটিকে সরাসরি দেখিনি, তার বইয়ের ভিতরে তার ছবি পেয়েছিলাম, তার ছবি নিয়ে এসেছিলাম, সেইদিন রাতের খাওয়ার খেতে বসেই আমি আমার বাবা-মা কে বলেছিলাম আমার মনের কথা, ঐ মেয়েটির বিষয়ে বলেছিলাম, যে মা আমি পাঁচ বছর বিদেশ করে এসে তারপর তাকে বিয়ে করবো, আপনারা মেয়েটির বাবা মায়ের সাথে কথা বলে রাখুন, তারা যেন আমার জন্য তাদের মেয়েকে রাখেন, জবাবে, বাবা মা দুজনেই না বললেন, আমি আর কিছুই বলিনি, আমি তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম, কারন আমি আমার বাবা মায়ের অবাধ্য হবোনা, এটাই ছিলো আমার প্রতিজ্ঞা) চার-পাঁচদিন পর ঢাকায় গেলাম, আমার মা দুলাভাইকে মেয়েটির বিষয়ে সবকিছু বলেছেন, তখন থেকে দুলাভাই আমার সাথে খারাপ আচরন করতেন, (একদিন আমার ভাগ্নীকে স্কুল থেকে আনতে গেলাম, তার বান্ধবীরা তার কাছে আমার পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে আমার মায়ের কি জানি লাগে, এখানে আমার দুঃখ হলো সে আমাকে মামা বলে পরিচয় দেয়নি) সেইদিন থেকেই আমি পুরোপুরি পর ভাবতে লাগলাম তাদেরকে, যাইহোক অনেক কষ্ট করে বছর খানেক ছিলাম, এরমধ্যে অনেকিছুই হয়েছে সেগুলো না বললেও চলে, (কখনোই আমি বেতন পাইনি আমার হাতে, ভাবতাম মা-বাবাকে দিয়েছে, পরে শুনলাম কিছুই দেয়নি মা-বাবাকে), সেখান থেকে আসার কয়েক মাস পর আমাদের বাজারে এক দোকানদার (হাবিব) আমাকে সেলসম্যান এ চাকরি দিলো, দিনে ২০০ বা ৩০০৳ বেতন, দিনের টাকা দিনে দিবে বলেছিলো, দুই-তিনদিন কাজ করার পর যার ছবি এনেছিলাম তাদের বাড়ির সামনের দোকানে অর্ডার কাটতে গেলাম, ভ্যান ড্রাইভার মাল নিয়ে পিছনে, ভাবলাম তাদের বাড়ি থেকে একটু ঘুরে আসি, তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম তাদের মোবাইলে কি যেন একটা সমস্যা ছিলো সেটা দেখতে, আমি সেখানে গিয়েই চলে এসেছি, (সত্য হচ্ছে আমি কোনদিনই মেয়েটির সাথে কথা বলতে পারিনি, দেখাও করতে পারিনি, সবাই ভাবতো আমি প্রেম করছি) কাজ শেষে হিসাব করে দেখে ২টা ৫ লিটার সয়াবিন তেল নাই, সেই ভ্যান ড্রাইবারকে অনেক মেরেছে দোকানের মালিক, আমাকে কিছুই বলেনি, তবে আমার মা-বাবাকে ডেকে নিয়েছেন তার দোকানে, সে আমার মায়ের মোবাইলটা নিয়ে গেছে, তারপর, অপবাদ হলো, (আমি নাকি আমার প্রেমিকাকে সয়াবিন তেল দিয়েছি, কেন এতো মিথ্যে অপবাদ পাচ্ছি যানিনা,) তার কয়েক মাস পর আরেকটা মুদি দোকানে কাজ নিয়েছিলাম, লোকটা মোটেই ভালো ছিলোনা, অনেকেই চেনে তাকে (টুক্কুন মিয়া, নান্দিয়া পাড়া বাজার) দুই-তিনমাস চাকরি করে ছেড়ে দিলাম, তার মুরগির ফার্ম আছে, সেখানে খাটতে মোটেই ভালো লাগছিলোনা, কয়েক মাস পর আবারো ঢাকায় গেলাম, তখন আমার বাবা ঢাকা একটা মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করেন, বাবা চাকরিটা ঠিক করে দিয়েছিলেন, সেটাও ইলেকট্রনিক দোকান, দোকানের মালিক দুসম্পর্কে মামা হয়, (আলম) বেতন ২৫০০টাকা থাকা খাওয়া মালিকের, প্রথম মাসের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনলাম, ভাই-বোনের খবর নাই, (সত্য বলতে আমার বাড়ির কথা মনেই ছিলোনা তখন) দ্বিতীয় মাসে দেখি দোকানের মালিকের হিসেব মিলেনা, প্রত্যেকদিন খাতায় হিসাবে গড়মিল হয়, তিনি আমাকে সন্দেহ করতেন, কিন্তু আমি ওনার ১ পয়সাও চুরি করিনি, এইসব দেখে সেখান থেকেও চাকরি ছেড়ে দিলাম, তিনি আমাকে কিছুই বলেননি, তবে চাকরি ছাড়াতে তিনি মনে কষ্ট পেয়েছে হয়তো, আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলামনা, বিদেশে যাবো বলে চাকরিটা ছেড়েছিলাম, বিদেশ যাওয়ার কথাটা মিথ্যে ছিলো, কারন আমার আর অপবাদ সইতে ভালো লাগছিলোনা, ২০১১ সাল ছিলো সেটা, তারপর পনেরো-বিশদিন বাড়িতে থেকে আবার ঢাকায় গেলাম, আলম মামা আমাকে দেখে বলেন আমি যেন ১ বছর ঢাকায় না থাকি, আমি যেন অন্য কোথাও চলে যাই, তিনি আমার সাথে অনেক বাজে আচরণ করলেন, তারপর কয়েকটা দোকান পরেই আরেকটি ইলেকট্রিক দোকান ছিলো রাসেল ইলেকট্রিক সেই দোকানে গিয়ে দোকানের মালিককে সব বললাম, তিনি সব শুনে বললেন তার দোকানে থেকে কাজ করতে, (দোকানের মালিকের নাম আলী, আমি ওনাকে কাকা বলে ডেকেছিলাম, আলী কাকার বাড়ী ঢাকাতেই, বাহিরে কোন কাজ পড়লে করার জন্য বলেছেন তিনি) তবুও আলম সাহেব এসে জামেলা করেতেন, (আলম মামা ৫ ওয়ক্ত নামায পড়তেন ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত ভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে পারেনি, এখনো পারেনি), আমার জন্য রাসেল ইনেকট্রিক এর মালিক তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তারপর তিনি আমাকে তার সাইড কুড়িগ্রামে পাঠালেন, সেখানে আমি ১৯ দিন কাজ করেছিলাম, ১৯ দিন পর ঢাকায় আসলাম, তাও আলম সাহেবের একই কথা আমি ঢাকায় থাকতে পারবোনা, তারপর নিরুপায় হয়ে দারোয়ানের চাকরি নিলাম, ১০-১২দিন যেতে না যেতেই ইজ্জত সন্মানে টানাটানি শুরু হলো, লজ্জা করে আমার, এর মধ্যে শুনি রাসেল ইলেকট্রিক এর মালিক দোকান ছেড়ে দিবেন তার মেয়ের বিয়েতে টাকা লাগবে। ভাবলাম দোকানটা আমি নেবো, তখন মাত্র ৫৫ হাজার টাকা লাগবে বলেছিলো, আমি আমার বাড়িতে বললাম আমার মায়ের কাছে, মা বলেছে বিয়ের না করার আগে কোন ব্যাবসা করতে দিবেনা, তারপর বিদেশে যেতে চাইলাম তাও একই কথা বললেন, (আমাদের কিছু জায়গা জমি আছে সে জন্যেই বলেছিলাম দোকান নেওয়ার বিষয়ে, মা কখনোই জায়গা-জমি বিক্রি করতে চায়নি এখনো চায়না), কোন উপায় না পেয়ে বিয়ে করলাম, ২০১২ সাল ছিলো আমার বিয়ের বছর, সত্য বলতে তখনও আমি কিছুই বুঝিনা, ২০১৩ সালে ঢাকা আদাবর দোকান দিলাম, দোকান দেওয়ার কিছুদিন পর বাড়িতে আসছিলাম ট্রেনে করে, পকেটে দুইটা মোবাইল সামান্য কিছু টাকা, ট্রেনে এক মুরুব্বি ছিলেন আমার পাশের সিটে, তাকে দেখতে একজন আলেমের মতই লাগলো, কিন্তু লোকটি আমার জীবনটাই শেষ করে দিলো, তিনি আমাকে চানাচুর খেতে দিলেন, আমি খেয়েছিলাম, কারন লোকটিকে দেখে মনে হয়েছিলো তিনি আল্লাহর খাটি বান্দা, সেই চানাচুর খাওয়ায় পর আমি কিভাবে বাড়িতে এসেছি আমি যানিনা (এটা ১০০% সত্য আল্লাহ তায়ালা এবং আমার দুই কাধের ফেরেস্তারা সাক্ষী আছেন) আমি এসেছিলাম আমার শশুর বাড়িতে, কয়দিন আমার হুস ছিলোনা আমি যানিনা, তবে কেউ আমাকে বিস্বাস করেনি, আমি সুস্থ হওয়ার পরেও যখনি বলেছি কেউ বিস্বাস করেনি, তবে এটাই সত্য, আমি সেই পাগল অবস্থায় আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলাম, তাকে নিয়ে দোকানের ভিতরে ছিলাম, আমার দোকানে বসে তাতাল দিয়ে আমার হাত পুঁড়ে ফেলেছিলাম, আমি সত্যিই কিছুই বুঝিনি কিভাবে এসব করলাম, কেন করলাম, হাত পোঁড়ার দুই-তিনদিন পর আমার কিছুটা জ্ঞান আসলো, আমি সত্যিই আজ খুবই চিন্তিত, (আজ ১৮/০৪/২০২০, গত ১০-১৫ টি বছর কিভাবে কাটিয়েছি কিছুই জানিনা, কেনইবা এই দুনিয়ায় এসেছি, কেনোই বা এখনো এই দুনিয়ায় রয়েছি,) এবাবে ছয়-সাতমাস এলোমেলো ব্যবসা করার পর আমার সেই দুলাভাই আমার মাকে বললেন, তিনি আমাকে বিদেশে নিবেন, আমাকে আমার দোকান ছেড়ে দিতে, আমিও পাগলের মত আমার দোকান ছেড়ে দিলাম, একদিনের ভিতরেই দোকান ছেড়ে দিলাম, এডভান্স ছিলো ৮০,০০০ টাকা, ১ টাকাও পাইনি, দোকান ছাড়ার নিওম ৩ মাস আগে বলে রাখতে হবে, নিওম অনুযায়ী কিছুই করতে পারিনি তাই এডভান্সের টাকাটা পেলামনা, যাইহোক বিদেশে গেলে কিছুতো একটা করতে পারবো সমস্যা নেই এই ভেবেই সব করেছি, সাঁতদিনের মধ্যে বিদেশে নিয়ে যাবে বলেছিলো আমার দুলাভাই, কিন্তু সাঁত বছর কেটে গেলো এখনো বিদেশে যেতে পারিনি, এর মধ্যে আরো কয়েকবার ব্যাবসা দিয়েছিলাম, বিদেশের জন্যে লাইন দিয়েছিলাম, কিন্তু কোন রকমের সুযোগ করতে পারিনি, এখনো পর্যন্ত বেকার, যাইহোক এখন কি আর করবো, কোন রাস্তাতো আর নেই, (কেউ আমাকে কখনোই সাপোর্ট করেনি, সবাই বলেছে আমার দোষ, আমিতো আমার কোন দোষ দেখছিনা, পরিস্থিতি আমাকে এমন করে দিচ্ছে, আমার জায়গায় আপনি হলে কি করতেন কমেন্ট করে যানবেন) আবার ঢাকায় গেলাম, রাসেল ইলেকট্রিক বিক্রি হলো, আমাদের মুমিন ভাই সেটা কিনলেন, তার দোকানের নাম এখন শিকদার ইলেকট্রিক, তিনি সত্যিই আমার অনেক উপকার করেছেন, মুমিন ভাইয়ের বাড়ি বরিশাল, আমার বাড়ি নোয়াখালী, এখানে নোয়াখালীর অনেক লোক ছিলো, কিন্তু কেউই আমাকে সহযোগিতা করেনি, আমার মামারা পর্যন্ত আমাকে সহযোগিতা করেনি, তারাও ঢাকায় ছিলো, তারা সবাই আমাকে বলতো আমাকে দিয়ে কিছুই হবেনা, আপনারাই বলুন আমাকে দিয়ে এই পরিস্থিতিতে কি হতে পারে? কেউতো আমাকে সঠিক কাজে লাগাতে পারেনি, আমি কিভাবে কিছু করতে পারি? যাইহোক ঢাকার শহরে যদি কেউ আমার উপকার করে থাকেন তবে তিনি হলেন মুমিন ভাই, শুধু ঢাকার শহরে নয় তিনি আমার বাবা মারা যাওয়ার সময়ও আমাকে টাকা দার দিয়েছেন, তিনি আমাকে খাইয়েছেন, তিনি আমাকে তার বাসায় থাকার জায়গা দিয়েছেন, তিনি আমার আত্বীয় স্বজন সবার উপরে, তিনি এখনো আমার কাছে টাকা পাবেন, যাইহোক নভেম্বর-২০১৭ তে সোনাইমুড়ী মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকান দিলাম, এখানে এসেও খেলাম ধোঁকা, আমার কম্পিউটার খারাপ হলো, ঠিক করতে নিয়ে গেলাম সাকসেস কম্পিউটারে রাকিব রায়হান এর কাছে, এটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল, আমার কম্পিউটার খুলে আমাকে বসিয়ে রেখেছে, আমাকে সেখানে দেখে পাশের দোকানদারেরা আমাকে ডেকে জানতে চাইলো আমি এখানে কি করছি, আমার কথা শুনে সবাই আমাকে বললো রাকিব নাকি কম্পিউটারের ভালো পার্টসগুলো খুলে রেখে দেয়, এই ভয়ে আমি আর কোথাও যাইনি সেখানেই বসে ছিলাম, সন্ধ্যা হয়ে এলো, আমি বসেই আছি, হঠাত করে সে দোকানের সাটার বন্ধ করে দিলো, আমি জানতে চাইলে সে বলে সমস্যা নেই, আপনি বসেন আমি ঠিক করে দিচ্ছি, ৩০০ টাকা চাইলো আমার কাছে, আমি বললাম টাকা সাথে নেই আমার, দোকানে গিয়ে আনতে হবে, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সাটারে কেউ বাড়ি মারলো, পরপর কয়েকবার, আমি সাটার খুলতে গেলাম, সে খুলতে দিলোনা, বলছে তার বাবা এসেছে, কিছুক্ষণ পর বললো আমার বাবার সাথে রাগ করেছি, তিনি আমার সব টাকা নিয়ে যান, সে তার বাবার ডাকে একটিও জবাব দেয়নি, আমাকেও কোন জবাব দিতে দেয়নি, তার কিছুক্ষন পরে সে একটি বক্স বের করলো, এরমধ্যেই তার বাবা চলে গেছেন, সে বক্স থেকে কয়েকটি লালছে ট্যাবলেট বের করলো, সিগারেটের প্যাকেটের ভিতরের যেই সাধা জিনিসটা থাকে তার উপর একটা ট্যাবলেট দিয়ে নিছে গিয়াস লাইটের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে একটা পাইপ দিয়ে সিগারেট এর মত খাচ্ছে, আমাকেও খেতে বলছে সে, আমি খেতে চাইনি, সে কয়েকবার বলার পর আমি অল্প কিছুটা খেয়েছিলাম, তারপর আমার কম্পিউটার ঠিক করে দিলো, আমি চলে গেলাম, পরের দিন আবার কম্পিউটারে সমস্যা, আজ নিতে চাইনি, আমি বলেছি আমার দোকানে এসে ঠিক করে দিন, সে ঠিক করতে আসলো বিকেল বেলা, এসে দেখলো, কিন্তু কম্পিউটার ঠিক হয়নি, সে আমাকে সহ কম্পিউটার নিয়ে গেলো তার দোকানে, আজও একই রকম হলো, রাকিবের বাবা ডাকছেন বহির থেকে, কিন্তু আমরা কেউই জবাব দিচ্ছিনা, আমি জবাব দিতে চাইছি কিন্তু তার নিষেদের কারনে দিতে পারিনি, আজ রাকিবের বাবা আমাকে দেখেছেন তাদের দোকানে ডুকবার সময়, আজ খাওয়ার পর আমার কাছে সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে, আমি সেই দিন রাতে বাড়ি গিয়ে আমার মায়ের চুলের মূঠি চেপে ধরেছিলাম, যানিনা কেমন যেন হয়ে গেছি আমি, তারপর থেকে আমি রাকিবের ভালোর জন্য তার কাছে যেতাম, আমি তাকে এসমস্ত খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে চাইছিলাম, রকিব প্রত্যেকদিন আমার সাথে প্রতিজ্ঞা করতো সে আর কখনোই এগুলো খাবেনা, কিন্তু সে আমার অজান্তে খায়, আমি তার দোকানে গেলেই গন্ধ পাই, আমি তারপর তার সাথে রাতে ১০-১২ দিনের মত ছিলাম, তাকে আমি বুঝানোর চেষ্টা করতাম, মাঝেমধ্যে খেতাম, রকিব খেতো তার সাথে আমিও একটু একটু খেতাম, আমি রাকিবের বাবাকেও বলেছি এ বিষয়ে, তিনি আমাকে খারাপ ভাবতেন, আমি কখনোই কারো খারাপ চাইনি, কখনোই কারো ক্ষতি করিনি, কখনোই অন্যের কিছু চুরি করিনি যা আমি বলছি তা ব্যতিত, কিন্তু অনেক মানুষ আমাকে নিয়ে অনেক বাজে মন্তব্য করেছেন, আমি বলবো যার যা ইচ্ছা সে তাই ভাবুক, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আছেন, আর তিনিই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক, তিনি বিচার করবেন, আমি কিছুই বলবোনা কাউকে, আর যা কিছু আমি করেছি তার প্রমান আমি দিয়েছি, তার কিছুদিন পর দোকান ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় গেলাম, S-2 4th ফ্লোরে কাজ করেছিলাম, বাসা পাল্টানোর কাজ প্রায় অর্ধেক দিন লেগে গেছে, পশ্রাবের চাপ শুরু হলো, ওই বাসায় মহিলা ছিলো বলে তাদের ওয়াশরুম ব্যবহার করিনি, লাজ্জা লাগে, দ্রুত কাজ শেষ করে নিছে এসে দারোয়ানের বাথরুম খুজতেছিলাম, দারোয়ানের রুমে ঊঁকি দিয়ে খুজলাম, না পেয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি, মেইন গেইট পার হবো এমন সময় দারোয়ান সামনে দাড়ালো পুলিশের মতো, তাকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলাম, হাতে যন্ত্রপাতি ছিলো তাই আর বলিনি, কিছুক্ষন পর পস্রাব করে এসে শুনি দারোয়ান বলে গেছে আমি যেন সেই বাসায় আর কোন কাজে না যাই, আমি নাকি চুরি করার জন্যে তার রুমে গিয়েছিলাম, তাকে দেখে আমি চুরি করিনি, কথাগুলো শুনে আমি তাকে বলতে গেলাম, সে আমার কথা শুনতেই চাইলোনা, সে আমাকে গালিগালাজ করেছিলো, আমি আর কিছুই বলিনি তাকে, আমি শুধু কান্না করে আল্লাহর কছেই বলেছিলাম, আল্লাহর কাছে আমার একটাই প্রশ্ন তিনি কেন আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? তিনি কেন আমাকে এতো অবহেলা করছেন, আমিতো কোন অন্যায় করছিনা, তিনি কেন আমাকে এতো শাস্তি দিচ্ছেন, ভবিষ্যতে কি করবো কিছুই যানিনা, আল্লাহ তায়ালা আমার কপালে আর কি কি দুর্ভোগ রেখেছেন সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।। আমি দুঃক্ষিত আমার ভাই বোনদের জন্য কিছু করতে পারিনি বলে, আমি দুঃখিত আমার বাবা মায়ের জন্যে কিছু করতে পারিনি বলে, তবে সর্বক্ষন চেষ্টা করেছি, কিন্তু এমন কোন সুযোগ পাইনি,
ধন্যবাদ সবাইকে।।
""" কিছু প্রয়োজনীয় কথা"""
১) আপনারা যারা বাবা-মা আছেন, তারা অবশ্যই সন্তানের ইচ্ছা সম্মন্ধে জানতে চাইবেন।
২) চোট থেকেই বাচ্ছাদেরকে সঠিক শিক্ষা দিন।
৩) অবশ্যই ৫ ওয়াক্ত নামাজ শিক্ষা দিন, এবং পরকাল সম্মন্ধে সঠিক শিক্ষা দিন।
৪)মুরুব্বিদের সন্মান করতে শিখান।
৫) দয়াকরে মা-বাবা ভাই-বোন নিয়ে বসবাস করুন, এতে আপনার সন্তান খুব সহজেই সঠিক শিক্ষা পাবে।
৬) আপনার সন্তানের হাতে মোবাইল ফোন দিবেননা, এতে আপনার সন্তানের চোখ এবং মস্তিষ্ক ভালো থাকবে।
৭) বাচ্ছাদের সম্মুখে কখনো খারাপ কথা বলবেননা, কড়া ভাষায় কথা বলবেননা
৮) টেলিভিশন নাছ-গান এসব কিছু থেকে দূরে রাখবেন, আদর দিয়ে বুঝিয়ে বলুন, এতে আপনার সন্তান মাথায় উঠবেনা।
0 Response to "আমার জীবনের কিছুটা সময়ের কথা"
Post a Comment